ক্রীড়া ডেস্ক: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯ রানে হারিয়ে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। এ জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৮৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় রান। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তুলে ১৩৫ রান। এরপর বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচ পণ্ড হয়। ১৯ রানে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয় বৃষ্টি আইনে।
ফ্লোরিডায় দুই দলের ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায়।
স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩৫/৭, ১৭.১ ওভার (আশলে নার্স ০)
বাংলাদেশ ১৮৪/৫, ২০ ওভার (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩২, আরিফুল হক ১৮)
বৃষ্টি আইনে এগিয়ে বাংলাদেশ: বৃষ্টিতে আবারও বন্ধ দুই দলের মহারণ। তবে বৃষ্টি আইনে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ১৭.১ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১৩৫। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ এগিয়ে ১৯ রানে। বৃষ্টিতে খেলা পণ্ড হলে বাংলাদেশ জিতে যাবে ম্যাচটি।
মুস্তাফিজে বধ রাসেল: ২০ বলে ৪৭ রান তুলে বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠছিলেন আন্দ্রে রাসেল। ৬ ছক্কা ও ১ চারে বাংলাদেশকে ভয় দেখাচ্ছিলেন ডানহাতি এ হার্ডহিটার। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে রাসেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরি স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের ফুলটস বলে লং অফে ক্যাচ দেন রাসেল। আরিফুল স্নায়ু চাপ সামলে দারুণ ক্যাচ ধরেন সীমানায় দাঁড়িয়ে।
রনির প্রথম উইকেটে: দ্বিতীয় ম্যাচে ভালো করলেও উইকেট পাননি আবু হায়দার রনি। তৃতীয় ম্যাচে বাঁহাতি এ পেসার পেলেন উইকেট। তার শিকার কার্লোস ব্রাফেট। রনির বাউন্সারে লং অনে ক্যাচ দেন ব্রাফেট। ১০ বলে ৫ রান করেন ব্রাফেট।
৩০ বলে দরকার ৬৯: ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে করতে হবে ৬৯ রান। বাংলাদেশ কি পারবে স্বাগতিকদের আটকে রাখতে?
রভম্যান সাজঘরে: মুস্তাফিজের কাটারে বধ রভম্যান পাওয়েল। অফস্ট্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে বড় শট নিতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন রভম্যান। তার ক্যাচ ধরেন আবু হায়দার। ২০ বলে ২৩ রান করেন রভম্যান। তার আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৫ উইকেটে ৯৬।
রামদিনেকে ফিরিয়ে রুবেলের সাফল্য: ১২তম ওভারে রুবেল পেলেন দিনেশ রামদিনের উইকেট। ডানহাতি পেসারের বলে বোল্ড হন ১৮ বলে ২১ রান করা রামদিন। তার আউটের সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৪ উইকেটে ৭৭।
পাওয়ার প্লে’তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৩২: বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লে’তে ভালো করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬ ওভারে তুলেছে মাত্র ৩২ রান। উইকেট হারিয়েছে ৩টি।
প্রথম ওভারে সাকিবের উইকেট: সাকিবের নিচু হয়ে আসা বলে বোল্ড মারলন স্যামুয়েলস। ৭ বলে ২ রানে সাজঘরে ফেরেন স্যামুয়েলস। সাকিব নিজের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে এনে দেন সাফল্য। স্যামুয়েলসের আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৩ উইকেটে ৩২।
সৌম্যর উইকেট: ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন নাজমুল ইসলাম অপু। তার ওভার শেষ করার জন্য বোলিংয়ে আসেন সৌম্য সরকার। এসেই উইকেটের স্বাদ দেন বাংলাদেশকে। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে আউট চডরিক ওয়ালটন। সৌম্যর স্লোয়ারে লং অনে ক্যাচ দেন এভিন লুইসের পরিবর্তে দলে আসা ওয়ালটন। ১৯ বলে ১৯ রান করেন তিনি। তার আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২ উইকেটে ৩১।
ফ্লেচারকে ফেরালেন মুস্তাফিজ: উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেন মু্স্তাফিজ। আন্দ্রে ফ্লেচারকে আউট করেন বাঁহাতি পেসারের। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দেন ৭ বলে ৬ রান করা ফ্লেচার। তার আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১ উইকেটে ২৬।
তবুও ৩৮ ডট বল: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৮৪ রানের বিশাল পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন ভালোভাবেই। কিন্তু ১২০ বলের ইনিংসে ডট বলের সংখ্যাও কম নয়। ৩৮ বলে কোনো রান পায়নি বাংলাদেশ। ৩৮ বল মানে ৬.২ ওভার! স্ট্রাইক রোটেট যে বড় একটা সমস্যা তা আবার ফুটে উঠল।
মাহমুদউল্লাহ-আরিফুলে শেষটা রাঙাল বাংলাদেশ: শুরুটা দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ। লিটনের ব্যাটে ঝোড়ো শুরু পায় বাংলাদেশ। মাঝে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয় বোলাররা বাংলাদেশের রানের চাকায় লাগাম টানেন। তবে শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় নিজস্ব ছন্দে। শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশ পায় ৩৩ রান। ২০ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। তাকে সঙ্গে দেন আরিফুল। আরিফুল ১৬ বলে করেন ১৮ রান। দুজনের ২৫ বলে ৩৮ রানের জুটি লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা বন্ধ: ১৭তম ওভারের চতুর্থ বল করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কেসরিক উইলিয়ামস। ঠিক তখনই নেমে এলো বৃষ্টি। বৃষ্টির বাগড়ায় অাপাতত বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মহারণ।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটি ভাঙলেন পল: লিটন কুমার দাস আউটের পর মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব। দুজনের ব্যাটে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ১৬তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন কেমো পল। ডানহাতি এ পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারীতে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন সাকিব। ২২ বলে ২৪ রান করেন সাকিব। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৪৬।
বাজে শটে লিটন সাজঘরে: কেসরিক উইলিয়ামসের স্লোয়ার ডেলিভারী ঠিকমতো পিক করতে পারেননি লিটন। হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া লিটন এগিয়ে এসে শট নিলেন। কিন্তু টপ এজ হয়ে বল উঠল হাওয়ায়। মিড অফে নার্স সহজ ক্যাচ ধরে লিটনকে সাজঘরের পথ দেখান। ৩২ বলে ৬১ রান করেন লিটন। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় লিটন তার ইনিংসটি সাজান। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১০২।
শতরান পেরিয়ে বাংলাদেশ: ১০.৩ ওভারে দলীয় শতরানের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পঞ্চাশ রান পেয়েছিল মাত্র ২২ বলে। পরের পঞ্চাশ রান পেল ৪১ বলে।
ব্রাফেটের দ্বিতীয় উইকেট: কার্লোস ব্রাফেটের সিমআপ ডেলিভারীতে উইকেট থেকে সরে খেলতে গিয়ে রামদিনের হাতে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিম। ১৪ বলে ১২ রান করেন মুশফিক। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৯৭।
২৪ বলে লিটনের ফিফটি: ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটির স্বাদ পেলেন লিটন কুমার দাস। মাত্র ২৪ বলে মাইলফলকে পৌঁছান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৫ চার ও ৩ ছক্কায়।
পাওয়ার প্লে’তে দুর্দান্ত বাংলাদেশ: পাওয়ার প্লে’তে ৭১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এর পুরো কৃতিত্বই লিটনের। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ১৭ বলে তুলেছেন ৪৫ রান।
আবারও ব্যর্থ সৌম্য: ক্রিকেটটা যেন ভুলতেই বসেছেন সৌম্য সরকার! ব্যাটে রান নেই। শারীরিক ভাষাতেও নেই আত্মবিশ্বাস। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকা সৌম্য আজও ব্যর্থ। ৪ বলে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কেমো পলের স্লোয়ার ডেলিভারীতে লং অনে ক্যাচ দেন সৌম্য। তার আউটের সময়ে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৬৬।
ঝড় তুলে তামিমের বিদায়: ১৩ বলে ২১ রান তুলে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের রানের চাকা থামাতে তাকে আটকানো দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পঞ্চম ওভারে তামিমকে আউট করে কার্লোস ব্রাফেট স্বাগতিকদের প্রথম সাফল্য এনে দেন। ডানহাতি পেসারের স্লোয়ারে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন তামিম। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৬১।
দ্রুততম দলীয় ফিফটি: ২২ বলে দলীয় পঞ্চাশ রানে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের দ্রুততম পঞ্চাশ রানের ইনিংস। ফ্লোরিডায় টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই ঝড় তুলেছেন দুই ওপেনার তামিম ও লিটন। ৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের পুঁজি ৫৬ রান।
টস: টস জিতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
পরিবর্তন: উইনিং কম্বিনেশন ভাঙেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচের দল নিয়েই মাঠে নেমেছেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে একটি পরিবর্তন এসেছে। হার্ডহিটার এভিন লুইসের পরিবর্তে দলে এসেছেন চারডিক ওয়ালটন।
বাংলাদেশ দল: লিটন কুমার দাস, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আরিফুল হক, আবু হায়দার রনি, মুস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম ও রুবেল হোসেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল: কার্লোস ব্রাফেট (অধিনায়ক), স্যামুয়েল বদ্রি, আন্দ্রে ফ্লেচার, চারডিক ওয়ালটন, অ্যাশলে নার্স, কিমো পল, রোভমান পাওয়েল, দিনেশ রামদিন, আন্দ্রে রাসেল, মারলন স্যামুয়েলস, কেশরিক উইলিয়ামস।
হেড টু হেড: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এর আগে আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ৩টিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ৪টিতে। একটি ম্যাচ কোনো বের হয়নি। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার ক্যারিবীয়ানদের টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১২ সালে ঘরের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি জিতেছিল টাইগাররা।
সিরিজ জয়ের সূবর্ণ সুযোগ: ২০১২ সালের পর দেশের বাইরে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১২ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। আজ তৃতীয় ম্যাচে সিরিজ নির্ধারণ হবে। সাকিব, তামিম, মুশফিকদের সামনে সিরিজ জয়ের সূবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। পারবে কি বাংলাদেশ?
আত্মবিশ্বাসী তামিম: দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সিরিজ জিততে আত্মবিশ্বাসী তামিম,‘নিঃসন্দেহে তারা বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি দলের একটি। তবে আমরা যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি তাহলে আমরা যেকোনো দলকেই হারাতে পারব। দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের পর আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।’