তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে : ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সরকার একতরফা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় কারাগারে নিয়ে তার জামিন নিয়ে টালবাহানা করছে সরকার। একের পর এক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। জামিন নিয়ে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটছে আদালতে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কাজেই তাকে বাদ দিয়ে কখনো কোনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যারা বিএনপি ও ২০ দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের চিন্তা করছেন তারা অলীক চিন্তা করছেন। এদেশের মানুষ আরেকবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না। : গতকাল শুক্রবার গুলশানের ইমান্যুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে রাজনীতিবিদদের সম্মানে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। তিস্তার পানি বন্টনসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে ভারতের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী করেছেন জানতে চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতে পশ্চিমবঙ্গে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ করেছে- অত্যন্ত ভালো কথা। সেই সঙ্গে আমাদের প্রশ্ন, জনগণের প্রশ্ন আমরা আমাদের যে পাওনাগুলো রয়েছে, সমস্যাগুলো রয়েছে সেই সমস্যাগুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কথা বলছেন কিনা। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল তখনই তারা বলেছিল যে, এখন এটা শুধু সময়ের ব্যাপার যে, আমরা তিস্তা নদী পানি বন্টন চুক্তি করতে পারবো। অথচ দীর্ঘ ৯ বছর হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত তিস্তা নদীর এক ফোঁটা পানির ব্যাপারেও কোনো চুক্তি হয়নি। : মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু তিস্তা নয়, অভিন্ন যে ১৫৮টি নদী রয়েছে সেই নদীগুলোর হিস্যার ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, সামরিক চুক্তি হচ্ছে। সীমান্তে যে মানুষ হত্যা করা হয় সেটাকে বাদ দিয়ে ট্রানজিট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বন্দর নির্মিত হচ্ছে। আমরা অবশ্যই কানেকটিভিটির পক্ষে, আমরা অবশ্যই একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সংযোগ স্থাপন হবে তার পক্ষে। একই সঙ্গে তার বিনিময় আমরা কী পাচ্ছি সেটাও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা বারবার বলছি, এভাবে জনগণকে বোকা বানিয়ে, জনগণের সাথে প্রতারণা করে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন। : স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন যে সংশোধন এনেছে তা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে তারা সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের প্রচারণায় নামার জন্য অনুমোদন দিয়ে কাজ করছে। আমরা খুব স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এই বিধি ইসির পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি সংসদ সদস্যদেরকে প্রচারণায় নামতে দেয়া হয় তাহলে সেখানে কিছুতেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। সেই কারণে আমরা এটার বিরোধিতা করেছি। আমরা মনে করি যে, এটা এখনো আইন হয়নি। এটা থেকে তারা (ইসি) বিরত থাকবেন এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কাজ তারা করবেন। : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসি তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলেও মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও জানান মির্জা ফখরুল। মাদক বিরোধী অভিযানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সরকার বিভিন্ন অভিযানের নামে এদেশের নিরীহ মানুষদের হত্যা করছে। আজকে আবার নতুন যে অভিযান শুরু করেছেন হঠাৎ করেই রোজার মাসে নির্বাচনের বছরে আপনারা মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করেছেন। আগে নিজের ঘরটা পরিষ্কার করুন। আপনার ঘরের মধ্যে কত জন আছেন যারা মাদকের ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত তাদেরকে আগে নিয়ে আসুন। তাদেরকে নিয়ে আসার পরে হতদরিদ্র মানুষ যারা সত্যিকার অর্থে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত কি না বা তাদের যে ভয়াবহ পরিণতি বন্দুকযুদ্ধের নাম করে হত্যা করা, ক্রসফায়ার করা, বিচারবহির্ভূত হত্যা করাÑ সেটা আইনসম্মত হচ্ছে কি না, মানবতার বিরুদ্ধে যাচ্ছে কি না। আজকে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলের কাছে এই অভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চালানো হচ্ছে। এটা শুধুমাত্র আরেকটি কৌশল বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। : জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার। এছাড়াও ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরোয়ার, আবদুল হালিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীব, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, যুগ্ম মহাসচিব মো. ফরিদউদ্দিন, বিজেপির আবদুল মতিন সাউদ, খেলাফত মজলিশের মাওলানা শেখ গোলাম আজগর, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, মাহমুদ খান, ন্যাপের মহাসচিব মোস্তফা ভুঁইয়া, ন্যাপ-ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান এএইচএম কামরুজ্জামান খান, মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ইফতার করেন। ইফতারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, আনোয়ারা বেগম, মাওলানা রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট শফিউদ্দিন ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীম, নাগরিক দলের সভাপতি সৈয়দ মো. ওমর ফারুকসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।