ঢাকা, ০৮ জুলাই- ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ছেলেরা অত্যন্ত ভালো খেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার চীন সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ছেলেরা তো ভালোই খেলেছে। তারপরও তাদের নিয়ে সমালোচনা কেন।
সমালোচনা করতে হলে অন্যদের নিয়েও করেন। অন্য অনেক ভালো ভালো দলও তো খারাপ করেছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ছেলেদেরকে কেউ খারাপ বলতে পারবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৩ জুন রাখাইনকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে।
কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের এশিয়া প্রশান্ত-মহাসাগরীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ব্রাড শেরম্যান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান।
এ নিয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরণের প্রস্তাব গর্হিত কাজ। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের আয়োতন নিয়ে সন্তুষ্ট। তাছাড়া মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। হ্যা, সেখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছে। সেটা সমাধানে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিবে এটাই আমরা চাই।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অর্থনীতির উন্নতি চাইলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে। যদি এটা মেনে না নেন তাহলে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দিতে হবে, দেশের অর্থনীতি উন্নতি হবে না।
তিনি বলেন, আমাকে ঘরে ঘরে বিদ্যুত দিতে হবে, অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হবে। এজন্য এলএনজি আমদানি করতেই হবে।
ভারতে গ্যাসের দাম কমার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে প্রতি বছর দুইবার গ্যাসের দাম বাড়ায়। এটা তাদের নীতি। সেই নীতিতেই তারা চলে। গ্যাসের প্রাইজটা তারা এক্সাস্ট করে চলে। এসময় আবাসিক-বাণিজ্যিক-শিল্প এবং সিএনজির ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে গ্যাসের দাম অনেক কম বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমি ৬১ টাকায় গ্যাস কিনে এনে ৯ টাকায় দিচ্ছি, তার পরও আবার অন্দোলন। একটা জিনিস খেয়াল করবেন, আন্দোলনে এখন বাম-ডান মিলে গেছে।
এর আগে সোমবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা গত ১ জুলাই ৫ দিনের সরকারি সফরে ঢাকা থেকে চীনে পৌঁছান। ৬ জুলাই দেশে ফিরে আসেন।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারকে বোঝানোর বিষয়ে বেইজিং ঢাকাকে আশ্বস্ত করে।
বেইজিংয়ে অবস্থানকালীন শেখ হাসিনা কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) মিনিস্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সঙ্গ তায়োর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এ সময় সিপিসি মিনিস্টার প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সমস্যাটি সমাধানের বিষয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সু চি এবং অন্যান্য মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে তার দলের আলোচনার বিষয়ে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ঢাকা এবং বেইজিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত নয়টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ৪ জুলাই চীনা প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন সিপিসির কার্যালয় গ্রেট হল অব দ্যা পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিংয়াংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়।
শেখ হাসিনা ডব্লিউইএফের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব এবং বিভিন্ন চীনা কোম্পানির সিইওদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনের অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন এবং তিয়েন আনমেন স্কয়ারে চীনা বিপ্লবের বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।